পিত্তথলির পাথর হওয়ার প্রধান কারণ হল পিত্তরসের ভারসাম্যহীনতা, যা পিত্তথলির ভেতরে কঠিন পদার্থের সঞ্চয় তৈরি করে। পিত্তথলির পাথর তৈরির বিভিন্ন কারণ রয়েছে, এবং এই সমস্যার পেছনে একাধিক প্রভাবশালী ফ্যাক্টর কাজ করে।পিত্তথলির পাথর প্রধানত দুটি কারণে হয়ে থাকে: কোলেস্টেরল পাথর এবং পিগমেন্ট পাথর। নীচে কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো।
Table of Contents [Hide]
১. অতিরিক্ত কোলেস্টেরল
পিত্তরসের প্রধান কাজ হল হজমে সাহায্য করা, বিশেষ করে চর্বি হজম করা। কিন্তু যদি লিভার পিত্তরসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কোলেস্টেরল নিঃসরণ করে, তাহলে পিত্তথলিতে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জমে গিয়ে পাথর তৈরি হতে পারে। এই ধরনের পাথরকে কোলেস্টেরল পাথর বলা হয়।
২. বিলিরুবিনের অতিরিক্ত নিঃসরণ
বিলিরুবিন হল একটি রাসায়নিক যা লিভার রক্তের লাল কণিকা ভেঙে গেলে তৈরি করে। কিছু রোগের কারণে (যেমন লিভারের ক্ষতি, সিরোসিস, হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া) বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে পিত্তরসে অতিরিক্ত বিলিরুবিন জমা হয়ে পাথর তৈরি হতে পারে, যাকে পিগমেন্ট পাথর বলা হয়।
৩. পিত্তথলি পুরোপুরি খালি না হওয়া
যদি পিত্তথলি পুরোপুরি খালি না হয় বা ধীরে ধীরে খালি হয়, তবে পিত্তরস ঘন হতে শুরু করে এবং এতে জমা কণাগুলি পাথরে পরিণত হতে পারে।
৪. খাদ্যাভ্যাস
- চর্বিযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পিত্তরসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
- ফাইবারের অভাব: খাদ্যে ফাইবার কম থাকলে হজমের সমস্যা হতে পারে, যা পিত্তরসের সঠিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এবং পাথর তৈরি করতে পারে।
- ওজন কমানো: অত্যন্ত দ্রুত ওজন কমানো পিত্তরসের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে এবং পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. স্থূলতা
স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন লিভার থেকে পিত্তরসে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল তৈরি করে, যা পাথর সৃষ্টির একটি প্রধান কারণ।
৬. বয়স ও লিঙ্গ
- বয়স: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পিত্তথলিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে ৪০ বছরের বেশি বয়সের মানুষদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
- লিঙ্গ: নারীদের মধ্যে পিত্তথলির পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এটি সাধারণত ইস্ট্রোজেন হরমোনের কারণে হয়, যা কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
৭. জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং হরমোন থেরাপি
ইস্ট্রোজেন ভিত্তিক জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা হরমোন থেরাপি লিভারকে বেশি কোলেস্টেরল তৈরি করতে বাধ্য করতে পারে, যা পিত্তরসে পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
৮. কিছু মেডিকেল শর্ত
- সিরোসিস: লিভারের এই রোগে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা পাথর তৈরি করতে সহায়ক।
- হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া: এই রোগে রক্তের লাল কণিকা ভেঙে যাওয়ার কারণে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
- ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিসে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়লে পিত্তরসের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়, যা পাথর তৈরি করতে পারে।
৯. বংশগত কারণ
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পিত্তথলির পাথরের সমস্যা থাকলে, এর ঝুঁকি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া যেতে পারে।
১০. গর্ভাবস্থা
গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা পিত্তরসে কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং পাথর তৈরির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার
পিত্তথলির পাথর সাধারণত পিত্তরসের ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন, খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা এবং কিছু চিকিৎসা শর্তের কারণে পাথর তৈরি হয়। জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে পিত্তথলির পাথর প্রতিরোধ করা সম্ভব।